এক ঝলমলে রাতে, কলকাতার এক প্রাচীন বাড়ির অন্ধকার ঘরে একটি রহস্যময় খুন ঘটে। বিখ্যাত গয়না ডিজাইনার অনির্বাণ সেন, যার সৃষ্টি সমগ্র বিশ্বে প্রশংসিত, তার নিজের শোবার ঘরে মৃত পাওয়া যায়। তার হাতে একটি অদ্ভুত লকেট ছিল, যা সাধারণত তিনি কখনও পরতেন না।
পুলিশ ইন্সপেক্টর সৌমিত্র রায়, একজন ধূর্ত ও অভিজ্ঞ গোয়েন্দা, এই মামলার তদন্তে নিযুক্ত হন। তিনি দ্রুত বুঝতে পারেন যে এই খুনের পিছনে কিছু গভীর রহস্য আছে। অনির্বাণের অতীত ও তার সম্পর্কগুলি খতিয়ে দেখার সময়, সৌমিত্র আবিষ্কার করেন যে অনির্বাণের জীবনে অনেক শত্রু ছিল, যারা তার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত ছিল।
তদন্তের সময়, সৌমিত্র একটি পুরনো ডায়েরি খুঁজে পান, যা অনির্বাণের বাবার ছিল। ডায়েরিতে একটি কোডের মতো কিছু লেখা ছিল, যা অনির্বাণ নিজেও বুঝতে পারেননি। সৌমিত্র বুঝতে পারেন যে এই কোডের মধ্যেই খুনের রহস্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে।
একটি বিপজ্জনক ও জটিল পথ অনুসরণ করে, সৌমিত্র শেষ পর্যন্ত একটি অপ্রত্যাশিত সত্যের সন্ধান পান। অনির্বাণের খুনি আসলে তার নিজের পরিবারের একজন ছিল, যে অনির্বাণের সম্পদ ও সুনাম হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল। লকেটের রহস্য হল, এটি একটি গোপন কক্ষের চাবি ছিল, যেখানে অনির্বাণের সবচেয়ে মূল্যবান গয়নাগুলি লুকিয়ে ছিল।
সৌমিত্রের বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার কারণে, খুনি শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে কিন্তু আইনের ফাঁককে কাজে লাগিয়ে সে আইনের জাল থেকে বেরিয়ে যায় কিন্তু এই ঘটনা সৌমিত্রের মনে একটি চিরস্থায়ী প্রশ্ন রেখে যায় - মানুষের লোভ ও ঈর্ষা কি কখনও শেষ হবে?
এরপরই কিছুদিন পর,অর্নিবান এর বাড়ি থেকে তার পিসতুতো দাদা রাহুল এর পচাগলা লাশ উদ্ধার হয় , সম্ভবত এক সপ্তাহ আগে কেউ তাকে খুন করে,তার লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়েছে,
তদন্তকারী পুলিশ অফিসার সৌমিত্র,মার্ডারস্পটে গিয়ে দুটো জিনিস দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে,
1. এই হচ্ছে সেই আত্মীয়,যে অর্নিবানকে খুন করেছে এবং সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো , রাহুলই যে খুনি তা তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা ছাড়া কেউই জানেনা কারণ তার বাবা মা কেউই ইহজগতে নেই,নিকট আত্মীয়স্বজন বলতে কেবল পিসতুতো দাদা রাহুল যে নিউটাউন এ থাকে, তাহলে কে মারল তাকে এইরকম নৃশংস ভাবে?
২.কেন জানিনা মৃতদেহ টাকে দেখার পর থেকে সৌমিত্র এর মনে হচ্ছে এই কাজ কোনো সাধারণ মানুষের নয়, এটা কোনো সাইকো কিলারের কাজ, না হলে কেউ এইভাবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ছুরি আর দা দিয়ে কোপায়, এবং আরো একটি বিষয় যেটা আরো একটি নতুন রহস্যর জন্ম দিচ্ছে, মৃতদেহের বুকে যেন কিছু একটা লেখা আছে, কিন্তু রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে যাওয়াই ভালো করে কিছুই বুঝতে পারা যাচ্ছে না।
এরপর ইন্সপেক্টর রায় লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন পোস্টমর্টেম এর জন্য, এবং প্রতিবেশীদের ধন্যবাদ জানালেন বিষয়টি প্রশাসনকে জানানোর জন্য।
পরের দিন যখন যখন ইন্সপেক্টর রায় তার টেবিলে বসে নির্জনে শার্লক হোমসের বইটা মনযোগ দিয়ে পড়ছিল (আগেই বলেছি তিনি নিজেই একজন অভিজ্ঞ গোয়েন্দা ছিলেন,তাই কাজের চাপ না থাকলে গোয়েন্দাগল্প পড়েই বেশিরভাগ সময়টা কাটান)।এমন সময় টেলিফোন এর ঘন্টা বেজে উঠল, প্রথমতঃ একটু থতমত খেয়ে ফোনের রিসিভারটা কানে তুলে নিলেন,ওপার থেকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ডা: মিঃ মুখার্জী এর গলা পাওয়া গেল , তিনি ইমিডিয়েট সৌমিত্রকে ডেকে পাঠালেন হাসপাতালে।
তারা সকলে ভিড় ঠেলে বাড়ির সামনে যেতেই ইন্সপেক্টর রায় সহ বাকি সবারই চোখ কপালে উঠে গেল,
স্পষ্টত দেখা গেল ফিফথ্ ফ্লোরের ওপেন ব্যালকনির রেলিং থেকেফোন রেখে দিয়েই, সৌমিত্র জিপ নিয়ে বেরিয়ে গেল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশ্যে।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ট্রাফিকে আটকে যাওয়ায় বেশ অনেকটাই দেরি হয়ে গেল পৌঁছাতে, এবং পৌঁছানোর পর তিনি জানতে পারেন যে আজকের মত মিঃ মুখার্জী বাড়ি চলে গেছেন,এমত অবস্থায় তিনি কলকাতার সমগ্র ট্রাফিকব্যাবস্থার মুন্ডুপাত করতে থাকলেন এবং জিপে চড়ে বসে যেই না জিপ স্টার্ট দিতে যাবেন,এমন অবস্থায় এবার তার সেলফোন টা বেজে ওঠে,দেখলেন রনিত ফোন করছে, রনিত সৌমিত্রের ছোট্টবেলার বন্ধু প্লাস রনিত নিজেও একজন কনস্টেবল, যে সৌমিত্রের পাঁচ বছর আগে এই থানায় এসেছে, এবং সৌমিত্র ও গতবছর ই এই থানায় এসেছে সাব ইন্সপেক্টর হয়ে,কর্মগত জীবনে তাদের এইভাবে দেখা হবে ভাবতে পারেনি কেউই,ফোনটা রিসিভ করা মাত্রই রনিত তাকে জানাল নিউটাউনের 32/B গলিতে আবারো একটা খুন হয়েছে, থানায় ফোন এসেছে এবং আবার ও যেতে হবে সেখানে
এই অবধি শুনে ফোনটা কেটে দিয়ে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট করে থানায় পৌঁছাল এবং রনিত সহ আরো তিনজন কনস্টেবল কে সাথে নিয়ে নিল এবং খুবই দ্রুততার সাথেই পৌঁছে গেল নিউটাউনের 32/B গলিতে, সেখানে গিয়েই তারা সকলে দেখল ভিলা নম্বর 303 এর বাইরে প্রচণ্ড ভিড় জন্মেছে,
তারা সকলে ভিড় ঠেলে বাড়ির সামনে যেতেই ইন্সপেক্টর রায় সহ বাকি সবারই চোখ কপালে উঠে গেল,
স্পষ্টত দেখা গেল ফিফথ্ ফ্লোরের ওপেন ব্যালকনির রেলিং থেকে একটা লাশ ঝুলছে অর্ধনগ্ন অবস্থায়,লাশটি ছেলের না মেয়ের সেটাও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কারণ মুখটি কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা রয়েছে ঠিক অনেক টা ফাঁসিতে চরা আসামির মত কালো কাপড় ,কিন্তু রক্ত জমে সম্পূর্ণ ফিকে হয়ে গেছে,গোটা গায়ে রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে। ইন্সপেক্টর সৌমিত্র তিনজন কনস্টেবল কে লাশটা নামতে বললেন, লাশটা নামানোর পর কালো কাপড়টা সরিয়ে দেখা মাত্রই সৌমিত্র এর বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো , এ তো নন্দিতা এর লাশ? এখন হয়তো আপনার ভাবছেন কে এই নন্দিতা? সৌমিত্র ই বা কি করে চেনে তাকে?
তো এর উত্তর এ বলে রাখি নন্দিতা ও সৌমিত্র হলো কলেজ লাইফের ভালো বন্ধু,তবে তাদের মধ্যে কেবল ভালো বন্ধুত্ব এরই সম্পর্ক ছিল, এবং আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলেন সৌমিত্র,মার্ডার করার ধরনটা কিন্তু আগের মতই অর্থাৎ, নন্দিতা কেও রাহুলের মতনই নৃশংস পাশবিক অত্যাচার করার পরই মেরেছে এবং দিন পাঁচেক পর ঝুলিয়ে দিয়েছে রেলিং থেকে। এবং এক্ষেত্রও বুকে যেনো কিছু একটা লেখা রয়েছে,যেটা রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে যাওয়াই বুঝতে পারা যাচ্ছে না কিছুতেই, এবার ও লাশটিকে দ্রুত মর্গে পাঠিয়ে দিয়েই দ্রুত তার নিজের ঘর কে চলে এলেন,বসে পড়লেন ড্রয়িং রুমের টেবিলে, অচিরেই তার চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে পড়তে থাকলো তারই ফোনের স্ক্রিনে। আসলে নন্দিতাকে সৌমিত্র খুবই ভালোবাসতো কলেজ লাইফ থেকেই,কিন্তু সৌমিত্রের এই ভালোবাসাটা ছিল একতরফা,সৌমিত্র এই কথাটা জানিয়েছিল নন্দিতা কে,কিন্তু নন্দিতা তার এই ভালোবাসার বন্ধন কে এড়িয়ে চলত সবসময়ই,নন্দিতা তাকে বলেছিল যে সে তাকে জীবনসঙ্গী নয় বরং ভালো বন্ধু হিসাবে পেতে চাই তাই, আর সৌমিত্রর ভালোবাসাটা আর বেশীদুর এগোয়নি, কিন্তু কোথায় আছে মানুষ প্রথম ভালোবাসার কথা কখনো ভুলতে পারে না,মৃত্যুক্ষণ পর্যন্ত মনে থাকে,তাই সৌমিত্র তাকে আজও ভুলতে পারেনি এবং বিয়ে করেনি সে আজও। এরপর সৌমিত্র চোখের জল মুছলো প্রতিজ্ঞা করল যে ,সে যেকোনো প্রকারে খুনি কে খুজে বের করবেই এবং তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার মর্যাদা কে সে ধরে রাখবে,
এরপরই বকনল এর ঠান্ডা জলের ঝাপটায় চোখমুখধুয়ে নিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে ফোন করলেন ডাক্তার মিঃ মুখার্জী কে, এবং আগামীকাল বিকালের মধ্যেই দুটো লাশ এরই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চাইলেন। এরপর ফোন রেখে দিয়ে কিছু না খেয়েই সৌমিত্র শুয়ে পড়ল
পরের দিন সাত সকালেই রণিত এসে হাজির সৌমিত্রর বাড়িতে,সৌমিত্র কিছুটা অবাক হলো তাকে দেখে? আসলে রনিত একটা গুরুত্তপূর্ণ ক্লু পেয়েছে গতকাল ডেডবডি থেকে,একটা ছোট্ট চিরকুট কাগজ যা ভিকটিম এর প্যান্ট এর পকেট থেকে উদ্ধার হয়েছে এবং সেটাই সে দিতে এসেছে, এবং এতে একটা আলাফানিউমেরিক কোড ও দশ অঙ্কের নম্বর লেখা রয়েছে ,কিন্তু কি এই কোড আর নম্বর এর মানে সেটা আর রণীত উদ্ধার করে উঠতে পারেনি,তাই নিয়ে এসেছে সৌমিত্রর কাছে, রনিত সৌমিত্র কে বললো সে কোড বাদে ওই নম্বর এ কল করে দেখেছে,কল লাগছেইনা,রং নাম্বার বলছে,
এটা শুনে সৌমিত্র তাকে খোঁজ নিয়ে জানতে বললো এই নাম্বার টা আদৌ কারোর নামে রেজিষ্টার আছে কিনা।, রনীত এরপর বেরিয়ে গেলো।
এইদিকে সৌমিত্র রেডী হতে থাকলো থানায় যাবার জন্য,
থানায় পৌঁছেই নিজের টেবিল এ বসে বসে সৌমিত্র এক মনে ভাবতে থাকলো চিরকুট এ লেখা কোড টার কি মানে হতে পারে?
অনেক ভাবার পর তিনি ভাবলেন এটা হয়তো স্পেশাল ক্যারেক্টার দিয়ে বানান কোনো পাসওয়ার্ড,কিন্তু কিসের পাসওয়ার্ড এটা? কোনো সেলফোনের পাসওয়ার্ড কি? কিন্তু তাহলে ওই টেন ডিজিট এর নাম্বার টা তাহলে কি?
এইসব সাত পাঁচ চিন্তা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ তার সেলফোনটা বেজে উঠলো, স্ক্রিনে নাম উঠছে মি: মুখার্জী,
এক সেকেন্ড ও দেরি না করে ফোন টা রিসিভ করে নিলেন, ফোনে ডাক্তার মী: মুখার্জী তাকে ইমিডিয়েট আস্তে বললেন হাসপাতালে,তিনি কথা দিলেন আজ যত দেরিই হোক না কেনো, আজ তিনি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সহ সমস্ত তথ্য দিয়েই বাড়ি যাবেন তার আগে নয়,কাজেই খুবই দ্রুত বেরিয়ে গেলেন, সাথে নিলেন রনিত কে। আজ ট্রাফিক না থাকায় কুড়ি মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলেন তারা । জানতে পারলেন নানা বিস্ময়কর তথ্য , ডাক্তারবাবু বললেন দুজনেরই খুন একজনই করেছে,কারণ দুটি লাশ এরই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এর মধ্যে হুবহু মিল রয়েছে ও খুন করার ও ধরন একই , শরীর এর প্রায় সমস্ত হাড়ই ভাঙ্গা,গোটা শরীরে কোপানোর দাগ, আর পেটের ভেতরে কাঁচের বোতল এর টুকরো পাওয়া গেছে ,সম্ভবত পেটে ভাঙা মদ এর বোতল ঢুকিয়ে উপর
থেকে মোচড় দিতে দিতে ভেঙে নিয়েছে উপর এর দিক টা,তাই ওপর থেকে দেখে কিছুই বোঝা যায়নি, এবং আরো একটা জিনিস , দুজনেরই বুকেতে একটাই শব্দ লেখা আছে, "AJIN KEYA" । মানে এক কথায় বলতে গেলে নরক যন্ত্রণার চেয়েও বেশি যন্ত্রণা দিতে দিতে খুন করেছে এদের দুজনকে, তীব্র ঘৃনা আর রাগ থাকলেও মানুষ এতটা পাশবিক হয় না হয়তো?
ডাক্তার মিঃ মুখার্জীর কথা শুনে সৌমিত্র নিজেই হতবাক,সত্যি তো এসব শুনে তো একবারের জন্যও মনে হচ্ছে না এটা কোনো সুস্থ মানুষের কাজ,নিশ্চই এটা কোনো অমানুষের কাজ না হলে কেউ এই ভাবে কষ্ট দিতে দিতে মারে, নিজের মনেই ভেবে যাচ্ছিল সৌমিত্র, সম্বিত ফিরে পেলো রনিত এর ডাকে, এরপর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সাথে করে নিয়ে দুজনেই থানায় ফিরে গেলেন, এবং থানায় ফিরেই সৌমিত্র এবং রণিত জানতে পারলো যে রনিত যে নাম্বার পাঠিয়েছিল সিমকার্ড কার নামে আছে জানার জন্য, আসলে সেটা কোনো মোবাইল নম্বরই নয়। এটা শোনার পর সৌমিত্র একটু হতাশ হলো ,কোনো সূত্র না পেয়ে
এমন সময় সৌমিত্র এর কানে এলো একটা কথা, পাশের ঘরে একজন কনস্টেবল আনআইডেন্টিফাইড পার্সন এর লিস্ট এ নতুন নাম অ্যাড করতে পারছে না,সেখানে অলরেডী অনির্বাণ এর নাম অ্যাড করা হয়েছে,কিন্তু রাহুল আর নন্দিতা এর নাম অ্যাড করতে যেয়েই সমস্যা হচ্ছে,কারণ ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ টেকনিক্যাল প্রবলেমের কারণে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন ই করা যাচ্ছে না বর্তমানে
পরবর্তী অংশ খুব শীঘ্রই আসছে:-মিস না করতে ফলো করুন।